সংক্ষেপে বিদ্যালয় পরিচিতি

নিজের পরিবারের বাহিরে একজন মানুষের সর্বপ্রথম যে বহির্মন্ডলের সাথে পরিচিতি ঘটে সেটা হলো তার বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ের জন্যে ‘আমরা ৯৮’ তার নাম বগুড়া জিলা স্কুল। প্রাচীন বাংলায় ‘পুন্ড্রবর্ধন’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া শহরের সবচেয়ে পুরাতন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৫৩ সালে। বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়, এই বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু ভগবতি চরন ঘোষ। ২০০৩ সালে এই স্কুলটি ১৫০ বছরে পদার্পন করে। স্কুলটির পাঠদান শুরু হয় তৃতীয় শ্রেনী থেকে এবং সমাপ্তি ঘটে দশম শ্রেনীতে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবার মধ্য দিয়ে। তৃতীয় শ্রেনীর ভর্তি পরীক্ষা অতীতকাল থেকে অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ন হয়ে আসছে আর এই জন্যেই ঐতিহাসিকভাবে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের ভিতরে এবং বাহিরে মেধার স্বাক্ষর রেখে যশ এবং খ্যাতি পেয়েছেন। ঐতিহ্যমন্ডিত এই বিদ্যাপীঠটি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ মানব সম্পদ গঠন ও তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে যেন অলিখিত গুরু দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তা পালনের মাধ্যমে ক্রমশ হয়ে উঠেছে প্রতিরোধ্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী।বাংলাদেশের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক মরহুম হুমায়ুন আহমেদ এবং তার অনুজ ডঃ জাফর ইকবাল, খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ভাষাসৈনিক গাজিউল হক, বিশিষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী ও চিকিৎসক ডাঃ পিনাকী ভট্টাচার্য্য, জনপ্রিয় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম সহ সমাজের অগনিত বিশিষ্ঠ ব্যক্তিগণ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি তাবৎ ভারত মহাবর্ষ এবং তদুপরি বাংলাদেশের অভ্যুদয়, স্বৈরশাসকের পতন সহ বহূ ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে ইতিহাসের পাতায় গুরুত্বপূর্ন হয়েও দাঁড়িয়ে আছে।

ইতিহাসঃ

বগুড়া জিলা স্কুলের ইতিহাসটার এই অংশটুকু প্রায় পুরোটা নেয়া হয়েছে স্কুলটির ওয়েবসাইট থেকেঃ

ব্রিটিশ সরকারের আমলে ইংরেজী শিক্ষার প্রসার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বগুড়ায় জন সাধারণ কর্তৃক পরিচালিত একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা ছিল বর্তমান জিলা স্কুলের সুতিকাগার। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টিকে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আনা হয় এবং “BOGRA GOVERNMENT HIGH ENGLISH SCHOOL” নামে আখ্যায়িত পায়। এই বিদ্যালয়টি গভর্নমেন্ট হওয়ার সাথে সাথেই তীব্র গতিতে উন্নতির পথে ধাবিত হতে থাকে এবং বাবু ভগবতী চরন ঘোষ মহাশয় -এর প্রথম প্রধান শিক্ষক হন। ১৮৬৫ সালে প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু পার্বতিচরন রায় (বি. এ.) দায়িত্বে থাকা অবস্থায় BOGRA GOVERNMENT HIGH ENGLISH SCHOOL -এর নাম পরিবর্তন করে শুধু BOGRA ZILLA SCHOOL নাম রাখা হয় ১৮৭৩-৭৪ সালে বিদ্যালয়টি সুত্রাপুরের “ব্রহ্ম সমাজ মন্দিরের কাছে অবস্থিত ছিল। পরবর্তীতে ১৮৮১-৮৫ খ্রিস্টাব্দে এটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয় এবং ঐ অব্দেই বিদ্যালয়ে ইটের তৈরী পাকা বিল্ডিং এ নির্মিত হয়।

১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লেঃ গভর্নর স্যার রিভার থমসন এর নামে বিদ্যালয়ের উত্তর পশ্চিম কোনে (সাতমাথার কোল ঘেঁষে) একটি থিয়েটার হল নির্মান করেন যা কাল ক্রমে বিদ্যালয়ের পাঠাগারে রূপান্তরিত হয়।

 

ছবিঃ থমসন হল (গুগল থেকে সংগৃহিত)

 

পাকিস্তান আমলে এই ছাত্রাবাসের নাম ছিল “মুসলিম ছাত্রাবাস” কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে -এর নাম রাখা হয ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ স্কুলের ছাত্র দোলনের নামানুসারে “শহিদ দোলন ছাত্রাবাস”। ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে গণপূর্ত বিভাগ এই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষনা করলে ধীরে ধীরে তা ছাত্র শূণ্য হয়ে পড়ে এবং ১৯৯৯ সালে ব্যবহারের অনুপযোগী হলে ডাইনিং হল ২ টি ভেঙ্গে তদস্থলে চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়। আর পরবর্তীতে ২০০৩-২০০৭ সময়কালে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ঐতিহাসিক ছাত্রাবাসটি মেরামত করে বসবাসের উপয়োগী করা হয় এবং আরো কিছু পুরাতন ভবন সংস্কার করা হয়। এই ছাত্রাবাসের নীচের ২ টি কক্ষ বর্তমানে টিফিনরুম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এতে ২০০৪ জন ছাত্র ৫০ জন শিক্ষক এবং ১৫ জন কর্মচারির মোট ২০৬৯ জন মানুষের টিফিন তৈরি ও বিতরণ করা হচ্ছে।

ছবিঃ বগুড়া জিলা স্কুলের ছাত্রাবাস (ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)

১৯৯০ সালে স্বৈরশাসকের পতনের পরে নবনির্বাচিত গনতান্ত্রিক সরকারের সময়ে ততকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার স্কুলে প্রথমবারের মতো সফরে আসলে শিক্ষক এবং ছাত্রদের পক্ষ থেকে একটি অডিটোরিয়াম স্থাপনের দাবী তোলা হয় এবং তা গৃহীত হয়। বর্তমানে এই অডিটোরিয়ামে বগুড়া জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচি পালিত হয়।

অবস্থানঃ

বগুড়া জিলা স্কুল একদম বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত। স্কুলের পূর্ব পাশে সার্কিট হাউস এবং দক্ষিণ পাশে আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠ অবস্থিত। স্কুলের সামনেই উত্তরপার্শ্বে কেন্দ্রীয় জেলা পোস্ট অফিস। নিচের ম্যাপ থেকে স্কুলের অবস্থানের একটা সামগ্রিক অবস্থান সম্পর্কে পুরোপুরি ধারনা পাওয়া যায়ঃ

শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে বিদ্যালয়টির অবস্থানের কারনে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই ছাত্ররা স্বাচ্ছন্দ্যে স্কুলে আসতে পারে।